সকালের নাস্তায় কিংবা দিনে অন্য সময় একটি কলা খাওয়াই হয়। তবে ঘরে লোক সংখ্যা কম থাকলে। কিংবা এক স’ঙ্গে বেশি কিনে আনলে বেশিরভাগই পচে যায়।
ফল হিসেবে কলা খুবই সহজলভ্য, সেইস’ঙ্গে পুষ্টিকর ও সুস্বাদুও বটে। কিন্তু বাজার থেকে কলা কেনার পর দেখা যায় অল্প সময়ের মধ্যেই তা পেকে ন’ষ্ট হয়ে যায়। তবে সঠিকভাবে র’ক্ষণাবেক্ষ’ণ করলে এই কলা বেশ কয়েকদিন রেখে খেতে পারবেন। জে’নে নিন কীভাবে কলা সংরক্ষণ করবেন।
তবে চলুন কিছু পদ্ধতি জে’নে নেয়া যাক। যেসব উপায়ে কলা দ্রুত পেকে আর ন’ষ্ট হয়ে যাবে না।
কলা ঝুলিয়ে রাখতে পারেন- ঝুলিয়ে রাখলে কলা ধীরে ধীরে পাকে। এর পেছনে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। গাছ থেকে কলা পেড়ে নিয়ে আসার পর থেকেই তা দ্রুত পাকতে থাকে। কলার কাণ্ডে থাকা ইথিলিন গ্যাস নির্গত হওয়ার কারণে এমনটা হয়। কিন্তু বাসায় কলা এনে যদি সমতল কোঠায় রাখেন, তাহলে কলা পেকে যাওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত হতে থাকে। তবে হুকের স’ঙ্গে ঝুলিয়ে রাখলে ইলিথিন গ্যাস ধীরে নির্গত হয়, সে কারণে কলা পাকেও ধীরে।
সবুজ কলা কিনুন- কলা যাতে দ্রুত ন’ষ্ট না হয়, তা নি’শ্চিত করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বাজার থেকে একটু সবুজ কলা কেনা। সবুজ বলতে একেবারে কাঁচা কলা কিনে নিয়ে আসবেন না। বেশি সবুজ কলা পাকতে সময় নেয় বেশি। এতে করে সময় মতো আপনি খেতে পারবে না। তাই কিছুটা হলুদাভ সবুজ কলাই বেছে নেয়া ভালো।
কলার কাণ্ড ঢেকে রাখু’ন- কলার কাণ্ড থেকে ইথিলিন গ্যাস নির্গত হয়ে দ্রুত পাকে কলা। তাই প্লাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে কলার কাণ্ড ঢেকে রাখু’ন।
ফ্রিজে রাখতে পারেন- অনেকে মনে করেন, কলা ফ্রিজে রাখলে তাড়াতাড়ি ন’ষ্ট হয়ে যায়। তবে কলা পেকে গেলে তা আরো কয়েকদিন ভালো রাখার জন্য ফ্রিজে রাখতে পারেন।
কলা ফ্রিজে রাখবেন যেভাবে- একগুচ্ছ কলা এক স’ঙ্গে ফ্রিজে রাখলে কলার খোসা দ্রুত ন’ষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আলা’দা আলা’দা কলা রাখতে পারেন। খোসা ছাড়িয়ে অথবা টুকরো টুকরো করে এয়ারটাইট বক্সে ভরে ফ্রিজে রাখলেও বেশ কিছু দিন ভালো থাকবে কলা।
জে’নে নিন ওজনকে নিয়ন্ত্রণ করে কোন কলা- ওজনকে নি’য়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বা’স্থ্যকর ও সুনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস গঠন করা অনেক বেশি জ’রুরি। এই স্বা’স্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে মাঝে ফল হিসেবে কলা থাকবে অবশ্যই। কাঁচা কিংবা পাকা যে কলাই হোক না কেন, প্রতিটি কলাই আলা’দা আলা’দাভাবে স্বা’স্থ্যের জন্য উপকারিতা বহন করে।
এখানে অনেকে বলতেই পারেন, কলার রঙে কি যায় আসে, ফলের উপকারিতাই আ’সল বিষয়। কিন্তু এই উপকারিতা অনেকটাই হেরফের হয় ফলের রঙের উপর ভিত্তি করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত এই ফলটি ওয়াটার রিটেনশনের স’মস্যা প্রশমিত করে। এ কারণেই কলাকে বলা হয় সবচেয়ে স্বা’স্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট।
তবে প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের কলার গুণই পরিবর্তিত হয়। জে’নে নিন সবুজ কলা (কাঁচা কলা), হলুদ কলা (পাকা কলা) ও বাদামি-হলুদ কলার (বেশি পাকা কলা) মাঝে কোন কলা থেকে সবচেয়ে উপকারিতা পাওয়া যাবে এবং কোন কলাটি ওজন কমাতে বেশি কা’র্যকর।
সবুজ কলা- সবুজ কলা অর্থাৎ কাঁচা কলাতে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ থাকে সবচেয়ে বেশি এবং চিনির উপ’স্থিতি থাকে সবচেয়ে কম। রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ সহজে এনজাইমের দ্বারা ভাঙ্গে না, ফলে দীর্ঘসময় পে’ট ভরা থাকে। আঁশসমৃদ্ধ এই স্টার্চ যতক্ষনে হ’জম হয়, ততক্ষণে ক্ষুধাভাব দেখা দেয় না। কাঁচা কলা খেতে হয় সিদ্ধ কিংবা ভেজে।
পাকা কলা- পাকা কলা দে’খতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। কাঁচা কলায় থাকা রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ পাকা কলার ক্ষেত্রে চিনিতে প’রিণত হয়। একইসাথে পাকা কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃ’দ্ধি পায় তুলনামূলক বেশি।
বাদামি-হলুদ কলা- বাদামি-হলুদ কলাকে বলা হচ্ছে অনেক বেশি পাকা কলা। কলা যত বেশি পাকবে, তাতে থাকা ফ্রুক্টোজে’র মাত্রাও তত বেশি বৃ’দ্ধি পায়। ফলে অধিক পাকা বাদামি-হলুদ কলাতেও ফ্রুক্টোজ থাকে তুলনামূলক বেশি। কিন্তু চিনির মাত্রা যতই বাড়ে কলার মাক্রোনিউট্রিয়েন্ট সমূহের মাত্রা ততই কমতে থাকে। এর ফলে বাদামি-হলুদ কলায় থায়ামিন, ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন-সিয়ের পরিমাণ থাকে স্বা’ভাবিক কলার চাইতে তুলনামূলক কম।
এদিকে বাদামি-হলুদ কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি, যা কোষের ক্ষ’তিকে পরিমিত ক’রতে কাজ করে। এছাড়া বাদামি-হলুদ কলার গায়ে কালো দাগ দেখা দিলে বুঝতে হবে তা ‘টিউমা’র নেক্রসিস ফ্যাক্টর’ তৈরি করছে। যাকে শ’ক্তিশালী ক্যানসার বিরো’ধী উপাদান হিসেবে বলা হয়।
এমনকি ‘ফুড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’র গবেষণা মতে অধিক পাকা কলা শ’রীরের রো’গ প্র’তিরো’ধ ক্ষ’মতা বাড়ায় সাধারণ কলার চাইতে অন্ত’ত আট গুণ।
ওজন কমাতে কোন কলা বেশি উপকারী? কলার সকল উপকারিতার সাথে এটাও মনে রাখতে হবে, মাঝারি আকৃতির একটি কলা থেকে পাওয়া যাবে ১০৫ ক্যালোরি। সেটা অল্প পাকা থেকে শুরু করে অনেক বেশি পাকা পর্যন্ত।
কিন্তু প্রশ্ন যেখানে ওজন কমানোর, সেখানে বলতে হবে সবুজ তথা কাঁচা কলার কথা। অন্য কলার চাইতে এ কলায় ফ্রুক্টোজে’র মাত্রা কম থাকে এবং রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ দীর্ঘসময় পে’ট ভরা রাখতে কাজ করে বলে, এই কলা ওজন কমাতে সাহায্য করবে সবচেয়ে বেশি। ওটসের সাথে সিদ্ধ করে কিংবা স্মুদি তৈরিতে আধা সিদ্ধ কাঁচা কলা ব্যবহার করা যেতে পারে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন