৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করাতে জনপ্রতি চার-পাঁচ গুণ অতিরিক্ত টাকা ফি বাবদ আদায় করছে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুসারে শিক্ষার্থীপ্রতি রেজিস্ট্রেশন ফি ৬০ টাকা।
সেখানে আদায় করা হচ্ছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এ বছর ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর জেএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন চলছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষার মানোন্নয়নে দেখভাল করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও কর্মকর্তা থাকলেও দুর্নীতির বিষয়ে তারা কিছুই বলেন না। অভিযোগ দিলেও তাঁলরা কার্যকর ব্যবস্থা নেন না। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চান না। এর ফলে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রকাশ্যে দুর্নীতি করে চলেছেন।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, জেএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফি ধরা হয়েছে জনপ্রতি ৫০ টাকা। বিলম্ব ফিসহ ৬০ টাকা। ১৫ মার্চ থেকে অনলাইনে ফরম পূরণ ও ফি জমা দেয়া শুরু হয়েছে, চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। রেজিস্ট্রেশন ফি (জরিমানা ছাড়া) ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধান ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০০ থেকে ৪০০ টাকা নিচ্ছে।
উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশন ফি হিসাবে জনপ্রতি নেয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। বোর্ডের নির্ধারিত ফির চেয়ে আট গুণ বেশি।
বোয়ালমারী সদরে অবস্থিত বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। এখানে রেজিস্ট্রেশন ফি হিসাবে জনপ্রতি নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। বোর্ডের নির্ধারিত ফির চেয়ে চার গুণ বেশি।
উপজেলার চতুল ইউনিয়নে অবস্থিত চতুল উচ্চ বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশনে জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বোয়ালমারী উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি আদায় করছে।
সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী মোসান্মাৎ সাদিয়া এবং দিলরুবা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে জেএসসি রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৪০০ টাকা করে নিয়েছে।’
চতুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেতু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে সাতৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমি ছিলাম না। সব শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল পর্যন্ত ৪০০ টাকা করে আদায় করেছে। আজ আদায় বন্ধ। আগামীকাল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে মিটিং আছে। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক টাকা আদায় করা হবে, যাদের কাছ থেকে বেশি নেয়া হয়েছে তাদের ফেরত দেয়া হবে।’
বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল আজিজ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি আমরা নিচ্ছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন ফির নামে যে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে, তা প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে চাপানো যাবে না। কারণ ওই বাড়তি ফির এক টাকাও প্রতিষ্ঠান পাবে না। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি করছে, তা বলা উচিত নয়। বলতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা দুর্নীতি করছেন।
রেজিস্ট্রেশন, বিভিন্ন পরীক্ষা, ফরম পূরণ, ভর্তি ফি ও প্রবেশপথ বিতরণেরর সময় কেন্দ্র সুবিধার নামে অতিরিক্ত যে অর্থ ওঠানো হয়, ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে তা প্রধান শিক্ষকরা ভোগ করেন। এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষকরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না। স্বচক্ষে দুর্নীতি দেখেও সব মুখ বুজে সহ্য করতে হয়।’
বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘রশিদ ছাড়া টাকা নেয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমি কয়েক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোনে নিষেধ করেছি। কিন্তু আমার নিষেধ কেউ মানছে না। এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই।’
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘টাকা বেশি নেয়ার বিষয়টি আমাকে ৪-৫ জন বলেছে। রশিদ ছাড়া যেন কেউ লেনদেন না করে। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন