জন্ম'দাত্রী মাকে দেখার ইচ্ছে পূরণ হলো না শিশু আব্দুল্লাহর। এর আগেই না ফেরার দেশে চলে গেল সে। রোববার (২১ মা'র্চ) সকালে আশ্রয়দাতা পরিবারের সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার পথে ফরিদপুরে এক মর'্মান্তিক সড়ক দু'র্ঘটনায় মা'রা যায় সে। একই সঙ্গে মা'রা যান তার আশ্রয়দাতা ‘মা’ জোসেদা বেগমও।
মর'্মান্তিক এ সড়ক দু'র্ঘটনায় তারা ছাড়াও আরও চারজন মা'রা গেছেন। যাদের সবার বাড়ি জেলার মহেশপুর উপজেলায় বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। আব্দুল্লাহ জন্মের পর থেকে মহেশপুর উপজেলার ভারতীয় সীমা'ন্তের ভৈরবা বাজারপাড়ার আব্দুর র'শিদের স্ত্রী জোসেদার কাছে বড় হয়ে আসছিল।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ ছয় বছর আগে ওই এলাকায় গ'র্ভবতী এক পাগলি আসেন। কিছুদিন পর পাগলির ঘরে ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এর কিছুদিন পর ওই পাগলি এলাকা ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে জোসেদা বেগম শিশুটিকে লালন পালন করে আসছিলেন। জোসেদা বেগম তার নাম রাখেন আব্দুল্লাহ। ঠিকানাহীন পথশিশু আব্দুল্লাহ বেড়ে উঠছিল সেখানেই।
সড়ক দু'র্ঘটনার বেশ কয়েকদিন আগে জাগো নিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়েছিল শিশু আব্দুল্লাহর সঙ্গে। এ সময় সে তার মাকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেছিল, সবাই আমাকে শুধু মা'রে। আমা'র মাকে আপনারা দেখেছেন। আমা'র মা নাকি পাগলি। মাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নি'হত জোসেদা বেগমকেও এলাকার সবাই পাগলি বলেই জানে। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমা'ন্তবর্তী ভৈরবা বাজারের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। স্বামী আব্দুর র'শিদ কখনো ভ্যান চালায়, কখনো কাঠখড়ি কুড়িয়ে 'বিক্রি করেন। স্বামীর সামান্য আয় আর অন্যের দেয়া সাহায্যে কোনরকমে চলে তাদের সংসার। আব্দুর র'শিদ তার দ্বিতীয় স্বামী। জোসেদার প্রথম স্বামী মা'রা যাওয়ার পর বিয়ে হয় আব্দুর র'শিদের সঙ্গে। তাদের সংসারে আরেক সদস্য আব্দুল্লাহ। যাকে বছর পাঁচ আগে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন জোসেদা।
জোসেদার আগের পক্ষে একটি ছেলে সন্তান ছিল। যে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীতে রূপান্তরিত হন। নাম রাখেন কাজলী। পরে তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের সঙ্গে মিশে বেশ টাকা পয়সা উপার্জন শুরু করেন। সে টাকাতে ঢাকায় কিছু সম্পদ তৈরি করেন।
এছাড়া একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বীমা করেন। গত দুই বছর আগে আগু'নে দগ্ধ হয়ে মা'রা যায় কাজলী। এরপর তার রেখে যাওয়া সম্পদ ও ইন্স্যুরেন্সের টাকা পেতে আ'দালতে মাম'লা করেন জোসেদা। সম্প্রতি সেই মাম'লার সাকসেশন রায় হয়। ফলে প্রা'প্ত টাকা বুঝে নিতে জোসেদা বেগম স্বামী সন্তান, বাদী-বিবাদীসহ দুই আইনজীবী ও এলাকার কয়েকজন পরিচিত মানুষ নিয়ে রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
পথিমধ্যে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দিতে পৌঁছালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে পাশের একটি ফিলিং স্টেশন থেকে একটি ট্রাক জ্বা'লানি নিয়ে মহাসড়কে ওঠার সময় মাইক্রোবাসটির সঙ্গে সং'ঘর্ষ হয়। এতে আব্দুল্লাহ ও তার পালিত মা জোসেদাসহ মাইক্রোবাসের ছয়জন নি'হত হন। জোসেদার স্বামী আব্দুর র'শিদ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভৈরবা বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, একসঙ্গে এত মানুষ মা'রা যেতে পারে প্রথমে আমর'া বিশ্বা'স করছিলাম না। পরে টেলিভিশনে সংবাদ দেখে বিশ্বা'স হয়। তাদের মৃ'ত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর এলাকা যেন মৃ'ত্যুপুরী মনে হচ্ছে। সবার মধ্যে শোক ছড়িয়ে পড়েছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন